November 22, 2024, 6:11 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বহুভাবে নিজেকে বিতর্কিত করা সেই কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, জর্জের নামে কুষ্টিয়া ও ঢাকায় একাধিক হত্যা মামলা আছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তুলে রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
সেলিম আলতাফ জর্জ কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসন থেকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে তাকে নিয়ে প্রচুর বির্তক উঠে। তাকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। সেখানে বল হয় পারিবারিক রাজনৈতিক অবস্থান এবং ত্যাগকে পুঁজি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সেলিম আলতাফ জর্জ। ওই সময় পর্যন্ত কখনো কোনো রাজনৈতিক পদপদবি না থাকলেও বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগেরই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ান। গড়ে তুলেন এমপি লীগ। কুমারখালী-খোকসা উপজেলায় পরিচিতি পান মামলাবাজ এমপি হিসেবে। নিজের কথার বাইরে গেলে অনুগতদের দিয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করান। এসব মামলার বিবাদী অধিকাংশই আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। সেলিম আলতাফ নিজেকে সর্বত্র ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দিলেও আদতে তিনি তা নন। ইংল্যান্ডের ব্যারিস্টার রেকর্ডে সেলিম আলতাফ নামে কোনো ব্যরিস্টারের রেকর্ড নেই।
কুমারখালী-খোকসা এলাকার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দুই উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলার শীর্ষ পদ পর্যন্ত সরকারি দলের নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। কারও বিরুদ্ধে একটি থেকে শুরু করে দশটিরও অধিক মামলা রয়েছে। বিরোধী দলের আমলে বাড়িতে থেকে রাজনীতি করতে পারলেও সরকারি দলের অনেকেই নিজ বাড়িতে থাকতে পারেন না। হারিয়েছেন সম্পদ। কেউ কেউ মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে দুনিয়ার মায়াও ত্যাগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব মামলা এবং নির্যাতনের পেছনে রয়েছে সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ। এ দুই উপজেলায় ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দটি করলেও মামলার ঘানি টানতে হয়। প্রতিবাদ করা যায় না নির্যাতন-দখলের বিরুদ্ধেও। সেলিম আলতাফের বাড়ি কুমারখালী উপজেলায়। গত নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে কুমারখালী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান অরুণকে নিয়ে আলাদা বলয় গড়ে তোলেন। অরুণ সম্পর্কে সেলিম আলতাফের চাচা। আধিপত্য তৈরি করতে বেছে নেন দলীয় নেতাকর্মী নির্যাতনের পথ।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ দুই উপজেলায় বর্তমানে মামলার সংখ্যা দেড় শতাধিক।
পত্রিকাটি আরও লিখে যে, সেলিম আলতাফ নিজেকে ব্যারিস্টার পরিচয় দিলেও এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জানা যায়, সেলিম আলতাফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর কিছুদিন ছিলেন লন্ডনে। তবে সূত্র বলছে, তিনি বার অ্যাট ল শেষ করেননি। যদিও নির্বাচনী পোস্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার পরিচয় হিসেবে লেখা হয় ব্যারিস্টার। তবে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার অ্যাট ল-এর সনদ জমা দেননি। এই ডিগ্রির কথাও উল্লেখ করেননি। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় লন্ডনের বার কাউন্সিলের ব্যারিস্টার রেকর্ডসে। মেইলের মাধ্যমে সেলিম আলতাফ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফিরতি মেইলে ব্যারিস্টার রেকর্ডস জানায়, সেলিম আলতাফ জর্জ নামের কোনো ব্যারিস্টার তাদের তালিকায় নেই।
সেলিমের বিরুদ্ধে খোকসা এলাকায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে নেয়া উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা প্রদানের অভিযোগও রয়েছে।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাননি।
সেলিম আলতাফ জর্জ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার দাদা প্রয়াত গোলাম কিবরিয়া ছিলেন কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর সহচর। তার চাচা আবুল হোসেন ও চাচি সুলতানা তরুণও এমপি ছিলেন। আরেক চাচা সামছুজ্জামান অরুণ কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ছিলেন।
Leave a Reply